Child Care Cover Image
Child Care Profile Picture
Child Care
@ChildCare • 0 những người như thế này

#শিশু #সুস্থতা #উচ্চতা #বৃদ্ধি
শিশুর সুস্থতা ও উচ্চতা বৃদ্ধিতে করণীয়
প্রতিটি শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশের সঙ্গে ডায়েটের সম্পর্ক আছে। তাদের খাবারের মেন্যু সাজাতে হবে সুষম খাবার দিয়ে।

খাবারের মেন্যু ও রুটিন যেমন হবে—

* খাবার পরিবেশনে বৈচিত্র্য রাখতে হবে। শিশুকে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে ঘরোয়া খাবারে।
একই রেসিপি বারবার অনুসরণ না করে ভিন্নতা আনতে হবে।

* শিশুর ক্ষুধা লাগলে তবেই খেতে বলুন। বাসায় সবাই মিলে সবজি খাওয়ার অভ্যাস করুন। ঘরের খাবারের মধ্যে মাছের পদকে প্রাধান্য দিন।
সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন শিশুকে সামুদ্রিক মাছ খেতে দেওয়া উচিত।

* খাবারের মেন্যুতে আয়রন জাতীয় খাবার রাখা উচিত। যেমন—মাংস, ডিম, দুধ, বিচি জাতীয় খাবার, বাদাম, পালংশাক, বিট, আনার, খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি। আর অবশ্যই আয়রন জাতীয় খাবার খাওয়ানোর পর এক টুকরা লেবু দেবেন শিশুকে।
কমলার রস বা মাল্টার রসও দিতে পারেন, এতে আয়রন ভালোভাবে শোষিত হবে।

* শিশুকে জিংক জাতীয় খাবার খেতে দিন। যেমন—সব ধরনের বাদাম, বিচি ও ডাল জাতীয় খাবার।

* এলার্জি হতে পারে এমন খাবার বাদ দিতে হবে। একেকটি শিশুর একেক ধরনের খাবারে প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
এই প্রতিক্রিয়াই হলো অ্যালার্জি। শুধু গায়ে র‌্যাশ ওঠা বা চুলকানি অ্যালার্জি নয়। খাবার খেলে যদি পেট ব্যথা করে, পায়খানায় সমস্যা হয়, গ্যাস হয় আবার র‌্যাশ বা চুলকানি হয়, তবে সেগুলোও অ্যালার্জির অন্তর্ভুক্ত।

* শিশুকে দিনে দুই থেকে তিনবার ফল খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে। শিশু যেন প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ, একটা ডিম এবং ডাল বা বাদাম জাতীয় খাবার গ্রহণ করে, সেদিকে লক্ষ রাখা উচিত।

* গাজর, মিষ্টি আলু, টমেটো এ ধরনের ফল বা অন্যান্য শক্ত ফলও ফিঙ্গার ফুড হিসেবে শিশুকে খাওয়ানো শেখাতে হবে।

* সপ্তাহে একদিন শিশুর পছন্দের মেন্যু রান্না করুন। তবে মনে রাখবেন, বাইরের মতো জাংকফুড বাসায় তৈরি করলেও সেটা পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত হবে না।

* বাইরের খাবার খাওয়ার ব্যাপারে রুটিন করে দিন। সপ্তাহে এক দিনের বেশি বাইরে না খাওয়ানোই ভালো।

ডায়েটের বাইরে যা মানবেন-

প্রতি মাসে শিশুর ওজন ও উচ্চতা মেপে দেখুন। বয়স দুই বছরের চেয়ে বেশি হলে প্রতি তিন থেকে ছয় মাস পর পর কৃমির ওষুধ খেতে দিন। পুরো পরিবারকে একসঙ্গে কৃমির ওষুধ খেতে হবে। প্রতিদিন বিকেলে এক থেকে দুই ঘণ্টা দৌড়াদৌড়ি করে খেলাধুলা করতে দিন। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টার ভেতরে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রোদে থাকতে বলুন। প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত পানি পান করার দিকে লক্ষ রাখুন।

image

#গরমে শিশুর খাবার এবং পোষাক কেমন হওয়া উচিত
যদিও বর্ষাকাল শুরু হয়েছে, তারপরও গরমের প্রকোপ একটুও কমেনি। আর প্রচণ্ড গরমে শিশুদের মধ্যে খাবারে অরুচি ক্লান্তিসহ নানা রকম অসুখ বিসুখ দেখা দেয়। গরমে শিশুদের অসুখ-বিসুখ থেকে রক্ষা করতে তাদের খাবারদাবার ও পরিচর্যার বিষয়ে বিশেষ সচেতন থাকতে হবে।

প্রথমেই শিশুর খাবারের দিকে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। অনেক শিশুই খেতে চায় না। তাই তাদের হাসিমুখে বা খেলার ছলে খাওয়াতে হবে। শিশুদের সুষম খাবার খেতে দিন, বাইরের খাবার না দিয়ে ঘরে বানানো খাবার শিশুকে খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শিশুকে শাকসবজি, মাছ, গোশত, দুধ, ডিম, ফলমূল দিতে হবে। শিশুদের দুধের তৈরি খাবার যেমন- কাস্টার্ড, ফিরনি, পুডিং ইত্যাদি খেতে দিতে পারেন। সবজি ও মুরগির স্যুপ এবং বিভিন্ন মওসুমি ফল শিশুকে খেতে দিন। এতে শিশুর শরীর সুস্থ ও সতেজ থাকবে। বাইরের কেমিক্যালে তৈরি জুস না দিয়ে বাড়িতেই জুস তৈরি করে দেবেন। তবে সরাসরি ফল খাওয়াই ভালো। এখন বাজারে নানা ধরনের ফল পাওয়া যাচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই সব ধরনের ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য সেটা বেশ ভালো।

অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি পান করাবেন। স্কুলগামী শিশুদের ব্যাগে ছোট বোতলে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে দেবেন যাতে সে অপরিচ্ছন্ন পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে পারে। শিশুকে ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি, আইসক্রিম, কোমল পানীয় খাওয়া থেকে বিরত রাখুন। শিশু স্কুল থেকে ফেরার পর চিনি, লেবুর শরবত অথবা দইয়ের ল্যাসি দিতে পারেন। স্যালাইনও দিতে পারেন। শিশুরা অনেক সময় পানি কম খেয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে খেলার ফাঁকে ফাঁকে তাকে পানি খাওয়ানো প্রয়োজন। শিশুদের টাটকা রান্না করা খাবার খেতে দিন। বাসি, পচা, অপরিচ্ছন্ন খাবার শিশুর জন্য ক্ষতিকর। সঠিক নিয়মে খাওয়া দাওয়া করালে শিশুদের অনেক ধরণের অসুস্থতা থেকে রক্ষা করা যায়।

গরমে শিশুরা বেশ ঘামে। তাই তাদের ঢিলেঢালা ও সুতির পোশাক পরানো উচিত। সুতির ফ্রক, ফতুয়া ও বিভিন্ন ধরনের হাতকাটা গেঞ্জি বেশ আরামদায়ক হয়ে থাকে। শিশুরা যেন অতিরিক্ত না ঘামে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত ঘামের কারণে অনেক সময় শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিশু অতিরিক্ত ঘেমে গেলে কাপড় পাল্টে শরীর শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে দিন। ঠাণ্ডা ও শীতল জায়গায় শিশুকে রাখুন। নিয়মিত গোসল করাবেন। শিশুর ত্বকের ধরন বুঝে ক্রিম, লোশন ও পাউডার ব্যবহার করুন। ঘামযুক্ত জামা কাপড় বা ভেজা জামা বেশিক্ষণ পরিয়ে রাখবেন না। তাতে শিশুর ঠাণ্ডা লাগার ভয় থাকে।

রোদে বের হতে হলে শিশুদের মাথায় ক্যাপ, সানগ্লাস, সানস্ক্রিন লোশন পরিয়ে নেবেন, তাতে রোদের তাপ সরাসরি গায়ে লাগবে না। শিশুদের এবং নিজেদের বাইরে বের হতে হলে সবসময় ছাতা ব্যবহার করবেন। এ গরমে শিশুদের চুল বড় না রাখাই ভালো। মেয়েদের পরিষ্কার ও ছোট চুল আটকে রাখতে সুবিধা হয়। গরমও খুব একটা লাগে না। শিশুদের বেড়ানো বা কোনো অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জামা কাপড় ও মেকআপ ব্যবহার করাবেন না। এতে শিশুদের অস্বস্তি বাড়ে। পোশাক ও সাজের সঙ্গে জুতার ব্যাপারটিও মাথায় রাখবেন। জুতা যেন আঁটসাঁট না হয়, আরামদায়ক জুতা পরানোর চেষ্টা করবেন।

শিশু অসুস্থ হলে..

প্রচণ্ড গরমে শিশুদের মধ্যে জ্বরের প্রকোপ অনেক বেশি দেখা যায়। প্রচণ্ড গরমে ঘেমে ঠাণ্ডা লাগা, পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া, জ্বরের সাথে কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, বমি, অরুচি, মাথা ঘোরালে ও মাথা ও চোখ ব্যথা, গায়ে র‌্যাশ ও ঘামাচি, ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসায় শিশু ভাইরাসে আক্রান্তসহ ইত্যাদি অসুস্থতা দেখা দেয়। এ সব অসুস্থতার কোনো উপসর্গ দেখা দিলে শিশুকে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শমতো চিকিৎসা ও ওষুধ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো অ্যান্টিবায়োটিক শিশুকে দেবেন না। জ্বরে আক্রান্ত শিশুর সারা শরীর স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে। ঠাণ্ডাপানি দিয়ে নয়। শিশুদের জ্বর থাকা অবস্থায় পানি ও পানিজাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়াতে হবে।

শিশু যখন সহজে কিছু খেতে চায় না তখন শরবত, ফলের রস, দুধ, স্যুপ, ইত্যাদি তরল খাবার কিছুক্ষণ পর পর অল্প অল্প করে শিশুকে খাওয়াতে হবে। নাক দিয়ে সর্দি পড়তে থাকলে, শিশুটির নাক পরিষ্কার রাখতে হবে। এ জন্য নাকের ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। বমি ও ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, তাজা ফলের রস, দই চিঁড়া, নরম ভাত, পাতলা ডাল, সবজি, মাছসহ স্বাভাবিক খাবার শিশুকে খেতে দিন। ঘর, বাথরুম, রান্নাঘর, বারান্দা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখুন। শিশুকে সুস্থ রাখতে চাই পরিমিত ঘুম, সরাসরি ফ্যানের নিচে শিশুকে না শোয়ানোই ভালো। সঠিক পরিচর্যায় এ প্রচণ্ড গরমেও আপনার শিশু থাকবে সুন্দর, সুস্থ ও প্রাণচঞ্চল।

image

সন্তানকে সবজি খাওয়াতে পারছেন না কিছুতেই?
পরিবারের ছোট সদস্যরা এমনকি পরিণত বয়সের সন্তানকেও সবজি খাওয়াতে বেগ পেতে হয় অনেক মায়ের। খেতে বসে সবজি দেখলে তারা নাক সিটকায়, মুখ বাকায়, জেদ করে। তবে সবজি না খাওয়ালে তো সুষম পুষ্টি মিলবে না। তাই অনাগ্রহী হলেও সন্তানকে সবজি খাওয়াতে হবে। কীভাবে খাওয়াবেন?

এখানে রইল কয়েকটি টিপস-

১। শিশুদের পছন্দমতো রান্না করুন। প্রয়োজনে সবজির মধ্যে মুরগির মাংস দিয়ে দিন।

২। কয়েক রঙের সবজি রান্না করুন। একটু কর্নফ্লাওয়ার আর ডিম দিন।
৩। সবজি দিয়ে কাটলেট তৈরি করুন, বার্গারও করে দিতে পারেন।

৪। শিশুরা ঝাল খেতে পারে না। তাই রান্নার পরে সবজিতে হালকা চিনি মিশিয়ে দিন।

৫। সবজি কেনার সময় খেয়াল করতে হবে, এগুলো যেন তরতাজা থাকে।

৬। রান্নার সময় খেয়াল রাখতে হবে, সবজি কেনার পর যত দ্রুত সম্ভব রান্না করতে হবে।

৭। সবজি ধোয়ার জন্য বেশি সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখা যাবে না।

৮। শিশুকে বোঝাতে হবে যে সবজি মানেই সেটা সব সময় বিস্বাদ নয়। বাড়িতে যদি ভালো করে সেটা রান্না করা যায়, খেতে ভালোই লাগবে।

৯। যখন সবজি রান্না করা হচ্ছে তখন, কিছু দায়িত্ব আপনার শিশু সন্তানকেও দেওয়া যায়। গাজর, আলু, মটরশুটি এগুলো যদি সে ধুয়ে দেয় বা রান্নার সময় একটু খুন্তি নাড়িয়ে দেয়, তাহলে তার মনে হবে সেও অনেক কিছু করেছে। যা জিনিসটা খাওয়ার প্রতি তার আকর্ষণ বাড়াবে।

১০। ধৈর্য না হারিয়ে ধীরে ধীরে আপনার শিশু সন্তানকে সবজি খাওয়ানো অভ্যাস করতে হবে। বকুনি দিলে জিনিসটা খাওয়া নিয়ে তার মনে ভয় আর অনিচ্ছা বাড়বে বই কমবে না।

১১। একটা শিশুর জন্য বাবা মা-ই প্রথম রোল মডেল হয়। তারা যা করে শিশুরাও চেষ্টা করে তেমন করতে। সবাই একসাথে খেতে বসলে শিশু যখন দেখবে পরিবারের সবাই ফল আর সবজি খাচ্ছে তখন সেও সেতি খেতে আগ্রহী হবে। সে খেতে না চাইলে জোর করবেন না। তাহলে খাবারের প্রতি তার আগ্রহ চলে যাবে। নিয়মিত একসাথে খেতে বসুন। এক সময় সে নিজেই প্লেট থেকে খাবার তুলে নেবে।

১২। নিয়মিত খাবার খেতে উৎসাহিত করার জন্য শিশুকে ছোট ছোট পুরস্কার দিতে পারেন। যেমন পেন্সিল, বা তার পছন্দের কার্টুন স্টিকার। নিয়মিত তার লম্বা হওয়ার বিবরণ রাখুন। শিশুকে জানান সে নিয়মিত খাওয়ার ফলে বয়সের সাথে সাথে তার শারীরিক গঠন বাড়ছে।

image

শিশুর শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে কী করে বুঝবেন?
মানব দেহের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য যত রকম পুষ্টি প্রয়োজন তার মধ্যে আয়রন অন্যতম। জন্মের পর প্রথম পাঁচ বছরে শিশুর সব রকম বিকাশের মূল ভিত্তি স্থাপন হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অনেক শিশুর দেহে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়। কিন্তু আয়রনের অভাব কেন হয় এবং কোন ধরনের শিশুদের মাঝে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়? কীভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান এ সমস্যায় ভুগছে কিনা? শিশুর শরীরে আয়রনের ঘাটতি আছে কিনা, এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতেই আজকের এই লেখা।

শিশুর জন্য আয়রন কেন জরুরি?
আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রাখে। এই হিমোগ্লোবিন ফুসফুস থেকে সারা শরীরে অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে। এটি শরীরের পেশীতে অক্সিজেন জমা রাখে এবং পরবর্তীতে কোষের জন্য নির্ধারিত কার্যক্রম গতিশীল রাখতে সাহায্য করে। বাড়ন্ত শিশুর স্নায়ুবিক ও মানসিক বিকাশের জন্যও আয়রন জরুরি। শিশুর শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় আয়রন কম থাকলে আয়রনের ঘাটতিজনিত রোগ দেখা দেয়। আয়রনের ঘাটতির ফলে মূলত যে রোগগুলো হয় তার মধ্যে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া প্রধান। আয়রনের অভাবজনিত কারণে যে রক্তশূন্যতা হয় তাকে আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া বলা হয়।

আয়রনের অভাবে ঝুঁকিতে যারা-
যে সমস্ত শিশু নির্ধারিত সময়ের আগেই জন্মগ্রহণ করে অথবা কম ওজন নিয়ে জন্মায়
এক বছর বয়সের আগেই শিশুকে গরু বা ছাগলের দুধ পান করালে
বুকের দুধ পানকারী শিশুকে ৬ মাস বয়সের পর আয়রন সমৃদ্ধ খাবার না দিলে
শিশুদের ফর্মুলা দুধ দিলে
নিয়মিত শিশুদের আয়রনহীন খাবার যেমন সুজি, বার্লি, চালের গুঁড়া, টিনজাত শিশু খাদ্য ইত্যাদি খাওয়ানো হলে
যেসব শিশু দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া বা কৃমির সংক্রমণে ভোগে
যে সমস্ত শিশু অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী হয়
শিশু গর্ভে থাকাকালীন সময়ে মা যদি আয়রনসমৃদ্ধ খাবার না খায় তাহলে জন্মগতভাবেই শিশুর দেহে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়.

আয়রনের অভাবের লক্ষণ-
খুব স্বল্প পরিমাণ আয়রনের অভাবেও শিশুর স্বাভাবিক দৈনন্দিন কার্যকলাপে ব্যাঘাত ঘটতে পারে
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আয়রনের অভাবে রক্তশূন্যতা না হওয়া পর্যন্ত লক্ষণ প্রকাশ পায় না
ক্লান্তি, অবসাদ ও ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়
স্বল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠে
হাত পা বেশিরভাগ সময় ঠান্ডা থাকে
শরীরের চামড়া ফ্যাকাসে হয়ে যায়
বুকে ব্যথা, ঘন ঘন শ্বাস ফেলা বা হার্টবিট দ্রুত হয়ে যায়
জিহ্বায় ঘা দেখা দেয়
হাত ও পায়ের নখ ভঙ্গুর হয়ে যায়

প্রতিরোধে করণীয়ঃ-
শিশুকে যদি ফর্মুলা দুধ বা কৌটার দুধ দিতেই হয় তাহলে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন আয়রন সমৃদ্ধ হয়। আর যদি শিশু শুধু বুকের দুধই পান করে সেক্ষেত্রে মা আয়রনযুক্ত খাবার খেলেই শিশুর চাহিদা অনেকাংশেই পূরণ হয়। বুকের দুধ পান করছে এমন শিশুর ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন এবং আয়রন সাপ্লিমেন্ট দিতে হবে। গর্ভে আট মাস সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই যে সব শিশু জন্মগ্রহণ করে তাদেরকে প্রি-ম্যাচিউর বেবি বলে। এই সব শিশুদের জন্মের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই বুকের দুধের পাশাপাশি আয়রন সাপ্লিমেন্ট দেয়া যায়। এই সাপ্লিমেন্ট এক বছর বয়স পর্যন্ত দেওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দিতে হবে।

শিশুর ছয় মাস বয়স থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে তা যেন অবশ্যই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার হয়। শিশুর রোজকার খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার যেন থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ ভিটামিন সি দেহে আয়রন শোষণ করতে সাহায্য করে। এছাড়া শিশুকে কৃমিমুক্ত রাখতে ২ বছর বয়সের পর শিশুকে কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে।

শিশুর শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণে যত খাবারঃ-

১)মাংস ও পোল্ট্রি জাতীয় খাবার-
এ ধরনের খাবারে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। শিশুর আয়রন ঘাটতি পূরণে এ খাবারগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এ জাতীয় খাবার রান্নার পূর্বে অবশ্যই সমস্ত চর্বিযুক্ত অংশ সরিয়ে ফেলতে হবে। খুব ভালোভাবে রান্না করতে হবে যেন শিশু সহজে হজম করতে পারে।

২)ডিমের কুসুম-
ডিমের কুসুম একটি উচ্চ মাত্রার আয়রন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। এছাড়াও এতে রয়েছে আরো অনেক পুষ্টি উপাদান। শিশু এমনিতে কুসুম খেতে না চাইলে কাস্টার্ড বা পুডিং বানিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।

৩)লাল চালের ভাত-
শিশুকে লাল চালের ভাত খাওয়ানো যেতে পারে। লাল চালে শুধু আয়রন নয়, পাশাপাশি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন বি থাকে।

৪)মিষ্টি আলু-
মিষ্টি আলু আয়রনের ভালো উৎস। আলু সিদ্ধ করে হাতে চটকিয়ে শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে।

৫)সি ফুড বা বিভিন্ন রকম সামুদ্রিক মাছ-
আয়রন ঘাটতি পূরণে এ খাবারগুলোও শিশুর জন্য সহায়ক। তবে অনেক শিশুরই সামুদ্রিক মাছে এলার্জি থাকতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৬)বাদাম ও শস্যবীজ-
বিভিন্ন রকম বাদাম, শুকনো বীজ যেমন মিষ্টি কুমড়োর বীজ, সূর্যমূখীর বীজ, তিল ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে।

৭)সবুজ শাক সবজি-
বিভিন্ন রকম সবুজ শাক সবজি বিশেষ করে পালং শাক, ব্রকলি ইত্যাদি আয়রনে ভরপুর। সাথে খাদ্য তালিকায় টমেটোও রাখা যায়। টমেটো সালাদের পাশাপাশি ঘরে স্যুপ বা সস বানিয়েও শিশুকে দেওয়া যায়।

শিশুর জন্মের পর থেকেই সে সঠিক পরিমাণে আয়রন পাচ্ছে কিনা সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি বয়স বাড়ার সাথে সাথে আয়রন পাবে এমন খাবারে শিশুকে অভ্যস্ত করা উচিত।

image

#শিশু #পেটব্যথা
শিশুদের পেটব্যথার নানা কারণ ও সমাধান
নবজাতক থেকে শুরু করে স্কুলগামী বেশিরভাগ শিশুই জীবনের কোনো না কোনো সময় পেটব্যথায় ভোগে। পেটব্যথা বিভিন্ন কারণে হয়। যেমন, খাদ্যনালিতে জীবাণু সংক্রমণ ও ডায়রিয়া বা আমাশয়, প্রস্রাবে সংক্রমণ, গ্যাস ও অ্যাসিডিটি, খাবারে অ্যালার্জি, কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম এবং কৃমি সংক্রমণ। এ ছাড়া টিউমার, অ্যাপেন্ডিসাইটিসসহ কিছু সার্জিক্যাল সমস্যায়ও শিশুর পেটব্যথা হতে পারে।


#অকারণে পেটব্যথা

৩ থেকে ১০ বছর বয়সি শিশুর ঘন ঘন পেটব্যথার প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশই কোনো রোগের জন্য হয় না। এটাই হলো অকারণে পেটে ব্যথা বা ‘ফাংশনাল এবডোমিনাল পেইন’। এ ধরনের ব্যথার নির্দিষ্ট কোনো চরিত্র নেই। মানসিক কারণে সাধারণত এমন সমস্যা হয়ে থাকে। এ ধরনের পেটব্যথায় শিশুরা অত্যধিক মানসিক চাপে ভোগে, কিছুটা সিরিয়াস প্রকৃতির হয়ে থাকে। শিশু স্কুলে যেতে না চাইলে, পড়া ভালো না লাগলে, পরিবারে অশান্তি থাকলে, বন্ধুরা কোনো বিষয় নিয়ে উত্ত্যক্ত করলে, হঠাৎ বাসা পরিবর্তন বা বন্ধু বিচ্ছেদ ইত্যাদির কারণে পেটব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এ ব্যথা কিন্তু ইচ্ছাকৃত নয়, বরং তার মনের ভেতরের মানসিক দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে পেটব্যথার মাধ্যমে।

#মানসিক ও শারীরিক কারণে ব্যথার মধ্যে পার্থক্য

* তিন বছরের নিচে শিশুর পেটব্যথা হলে তা সাধারণত রোগের কারণেই হয়ে থাকে।

* রোগের কারণে ব্যথা হলে শিশুরা সুনির্দিষ্টভাবে ব্যথার জায়গাটা দেখাতে পারে আর মানসিক কারণে হলে সেভাবে দেখাতে পারে না বা একেকবার একেক স্থানে দেখায়।

* ব্যথার সঙ্গে জ্বর, র‌্যাশ, হাড়ে ব্যথা, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হলে বুঝতে হবে অবশ্যই সেই ব্যথার নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে।

* ঘুমের মধ্যে ব্যথা হলে এবং ব্যথার কারণে শিশুর ঘুম ভেঙে গেলে কখনোই তা মানসিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

#গ্যাসজনিত ব্যথা

বড়দের মতো শিশুদেরও পেটে গ্যাস হয়। নবজাতকের পেটে গ্যাস হয় মায়ের দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতির ত্রুটির কারণে। এতে বাচ্চারা বাতাস খেয়ে ফেলে, তাই পেটে গ্যাস হয়। বাচ্চাদের মধ্যে কান্না খুব স্বাভাবিক কারণ। কান্নার মাধ্যমে শিশুরা তাদের অস্বস্তি প্রকাশ করে এবং তাদের প্রয়োজনীয়তার প্রতি পিতামাতার মনোযোগ আকর্ষণ করে। যদি শিশু কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই ক্রমাগত অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাঁদতে থাকে তবে সেটা উপেক্ষা করা উচিত নয়।

#তিন মাসের অধিক পেটব্যথা

তিন মাসের অধিক পেট ব্যথা সাধারণত কোনো গুরুতর অসুস্থতা বা রোগের কারণে হয় না। তিন থেকে চার মাসের কম বয়সি শিশুরা তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে কাঁদতে থাকলে এবং প্রতিদিন বা সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন সন্ধ্যার পর থেকে এবং প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা ধরে অবিরত কাঁদতে থাকলে তবে তা সাধারণত এ ধরনের পেটব্যথা হয়। এটি সাধারণত জন্মের দুই থেকে তিন সপ্তাহ পরে দেখা যায় এবং তিন থেকে চার মাস বয়স হলে আর থাকে না। পরিপাকনালিতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া ‘গাট মাইক্রোবায়োম’ নামক ব্যাক্টেরিয়াল কলোনি গড়ে ওঠা সম্পূর্ণ হওয়ার আগে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে যা পরিপাকনালির অপরিপক্বতা নামে পরিচিত। এ ধরনের ব্যথার ক্ষেত্রে বুকে ও পিঠে হাত দিয়ে মালিশ করলে, তলপেটের দিকে চেপে ধরলে শিশুর আরামবোধ হয়।

#গ্যাসজনিত ব্যথা

শিশুদের একইসঙ্গে নানা রকমের খাবার খাওয়ানো শুরু করলে গ্যাসজনিত ব্যথা দেখা দেয়। এ ছাড়া, বড় শিশুরা অতি ভোজন, মসলাযুক্ত বা তৈলাক্ত কিংবা ঝাল খাবার, আচার ইত্যাদি খেলে পেটে এসিডিটি হয়ে ব্যথা হয়। এ ক্ষেত্রে এসিডিটির ওষুধ খেতে হবে। তবে ব্যথা প্রকট হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ দিতে হবে।

#কোষ্ঠকাঠিন্য

যেসব শিশু গরুর দুধ বা বোতলের দুধ খায়, পাশাপাশি ৬ মাসের পর অপরিকল্পিতভাবে অন্য কঠিন খাবার খেতে শুরু করে বা শুধু সুজি, চালের গুঁড়ার খাবার খায়-তাদের পেটে ব্যথার অন্যতম কারণ কোষ্ঠকাঠিন্য। দুই কিংবা তিন দিন ধরে ঠিকমতো পায়খানা না হলে তা পেটের ভেতর জমে থেকে ব্যথার সৃষ্টি করে। এজন্য শিশুকে নরম খাবার দিতে হবে। অবস্থা জটিল হলে শক্ত খাবারের পরিবর্তে তরলজাতীয় খাবার যেমন সাগুদানা, মাতৃদুগ্ধ বেশি বেশি খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া কিছু ব্যায়াম করানো যেতে পারে যেমন সাইকেলের মতো শিশুর পা দুটোকে চালনা করা। বড় শিশুদের শাক-সবজি, আঁশযুক্ত খাবার ও ফল-মূল খাওয়ানোর পাশাপাশি নিয়মিত মলত্যাগ করায় অভ্যস্ত করতে হবে।

#খাবার কিংবা দুধে অ্যালার্জি

শিশুর কোনো খাবারে অ্যালার্জি থাকলে তা খাওয়ানোর ফলে পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, বমি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে গরুর দুধ বা গুঁড়াদুধের casein-lactalbumin and μ¦ lactoglobulin প্রতি অ্যালার্জি থেকে থাকে। অ্যালার্জি আছে বিষয়টি সন্দেহ হলে বা নিশ্চিত হলে তা খাওয়ানো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এ ধরনের জটিলতায় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

#কৃমি

কৃমি হলে বমি বমি ভাব, পেটব্যথা, পেট মোটা বা ভারি হওয়া, খাবারে অরুচি, মুখে থুথু ওঠা এবং কোনো কোনো কৃমিতে পায়ুপথের আশপাশে চুলকানি হতে পারে। কৃমি হলে সাধারণত অপুষ্টি ও রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। নোংরা পরিবেশ, অনিরাপদ পানি পান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, খালি পায়ে হাঁটা কৃমি সংক্রমণের জন্য দায়ী। ওষুধ নিয়ম মেনে খেলে আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সহজেই কৃমি দূর করা যায়। প্রতি তিন মাস পরপর পরিবারের সবাই একটি করে অ্যালবেনডাজল বড়ি সেবন করলে অথবা মেবেনডাজল পরপর তিন দিন খেতে হয়। সাত দিন পর দ্বিতীয় ডোজ খেতে হয়। শিশুদেরও একইভাবে সিরাপ খাওয়াতে হবে। তবে, দুই বছরের নিচে কোনো শিশুকে খাওয়াতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

image